বিএনপির প্রার্থীরা-২ আসনে বাবুতে কোণঠাসা নিজদল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এলাকা আড়াইহাজার উপজেলার রাজনীতি ও নিজ দল আওয়ামী লীগে একচ্ছত্র আধিপত্য সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর। ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদকের  রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বিএনপি এমনকি নিজ দলের অন্য মনোনয়ন-প্রত্যাশীরাও নির্বাচনী মাঠে কোণঠাসা।

দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কারো পক্ষে এখনো কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না গেলেও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

এই আসনের বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আবার মনোনয়ন চাইবেন। সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি।

তবে আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে প্রকট দলীয় কোন্দল। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগে এর ব্যাপকতা বেশি। এলাকায় খুন, মারামারি, ডাকাতি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কোরবানির ঈদের দুই দিন আগেও আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুুলিশের টেরোরিজম ইউনিটের কনস্টেবল রুবেল নিহত হন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। প্রধান আসামি অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন হলেন এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর কর্মী।

বাবুল একাধিপত্যের মধ্যেই কেন্দ্রীয় যুবলীগের যোগাযোগ ও তথ্যবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল পারভেজ নৌকা প্রতীকে নিজের মনোনয়নের আশায় এলাকায় নিয়মিত জনসংযোগ করছেন। সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলোতেও তিনি সরব হচ্ছেন।

এ ছাড়া মনোনয়নের প্রত্যাশার মাঠে নেমেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ দুর্যোগ ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেন ও সাবেক এমপি এমদাদুল হক ভুইয়া। মমতাজ হোসেন ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এই দুই মনোনয়ন-প্রত্যাশী রাজনৈতিক জনসংযোগে না থাকলেও ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগদান করছেন।

আড়াইহাজারে এমপি বাবুর শক্ত অবস্থানের কারণে জোরালো প্রচারণায় নামতে পারছেন না বাকি তিনজন মনোনয়ন-প্রত্যাশী। এমপি বাবুর সঙ্গেই রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ ভুইয়াসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন-প্রত্যাশী হিসেবে মাঠের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ এম বদরুজ্জামান খান খসরু, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ ও সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর। কিন্তু গত ৬ সেপ্টেম্বরের পর থেকে তাদের নির্বাচনী রাজনীতি অনেকটা স্থবির।

৬ সেপ্টেম্বর আড়াইহাজারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নজরুল ইসলাম আজাদসহ ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নাশকতার মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় ৩১ অক্টোবর আদালতে ৮১ জন নেতাকর্মী আত্মসমর্পণ করলে চারজনের জামিন মঞ্জুর করে বাকি ৭৭ জনকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর থেকে বিএনপি মাঠে নির্বাচনী প্রচারণার রাজনীতিতে স্থবির।

এখানে বিএনপির অবস্থা এতটাই দীন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের ভেতরে ও সামনে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি তারা। এমনকি বিএনপির কার্যালয়ের তালাও খুলতে পারেনি আজ পর্যন্ত। বিএনপির নেতারা যার যার বাড়িতে ও এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এ ছাড়া বিএনপির কমিটিতে বিশৃঙ্খলা আর নেতাদের বিরোধ-বিভক্তি তো রয়েছেই।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন-প্রত্যাশীর ভিড়ে নির্ভার জাতীয় পার্টি। গত ১১ আগস্ট আড়াইহাজারে ভাষাসৈনিক ডা. সাদত আলী সিকদারের দোয়া মাহফিলে এসেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। সেখানে দলের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য কেন্দ্রীয় যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটনকে লাঙলের প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর